۲۴ آذر ۱۴۰۳ |۱۲ جمادی‌الثانی ۱۴۴۶ | Dec 14, 2024
ইসরাইল কোনো রাষ্ট্র নয়; দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ফিতনা
ছবি: প্রতীকী

হাওজা / ইহুদি মাত্রই ইসরাইলের নাগরিক। এটা একটি রাজনৈতিক আইওয়াশ।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, সেই যে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের পুনর্বাসন শুরু হলো আর ওই অঞ্চলে সংঘাত আর রক্তক্ষরণও শুরু হলো। আজকে প্রায় ৭ দশক অতিবাহিত হতে চলল। একটা দিনও নেই যেদিন কোনো অমানবিক ঘটনা ঘটেনি। পুরো অঞ্চল জুড়েই আরব। আরবরা আজ বিভাজিত।

একই ধর্ম, একই নবী, একই কিতাব, একই কেবলা, একই ভাষা, প্রায় একই সংস্কৃতি, একই ভূ-প্রকৃতি। এত অন্ত্যমিল থাকার পরেও তারা আলাদা। এই বিভাজনের কারণ একটাই- নয়া কল্পিত দেশ নামক ফিতনা-ইসরাইল।

এই অঞ্চলের সংঘাতের রক্তক্ষরণ হচ্ছে এখন সারা দুনিয়ার মানুষের হৃদয়ে। সারা দুনিয়াতে এর প্রভাবে মনস্তাত্ত্বিক সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। পৃথিবীকে ভাগ করা হয়েছে জেন্টাইল আর জুইশে। শুধু জুইশ হলেও হবে না তার ভেতরে আবার জায়োনিস্ট আর এন্টিজায়োনিস্ট। জায়োনিস্টের জন্য দুনিয়ার সব অপকর্ম বৈধ করে নেয়া হয়েছে। কেবলমাত্র তাদের নিরাপত্তার প্রয়োজনে আইন ও রীতিনীতি সংস্কার করা যাবে। যে হলোকাস্টের গল্প বিক্রি করে, দোহাই দিয়ে তারা দুনিয়ার কাছে থেকে সুবিধা নিচ্ছে। সেই একই হলোকাস্ট দুনিয়ার ওপর চালিয়ে যাচ্ছে আত্মরক্ষার নামে। কি প্রহসন! আধুনিক দুনিয়াতে এত দীর্ঘ ও ধারাবাহিক জুলুম আর কখনো ঘটে নাই।

এর কোন সমাধান মানুষের হাতে নেই। তবে জুলুমে জর্জরিত হতে হতে মজলুমেরা খালি হাতে প্রতিরোধ করতে করতে এখন টেকনোলজির ব্যবহার শিখেছে। তুলনামূলক কম সক্ষমতা থাকলেও এখন তারা প্রতিরোধ করতে পারে সমানে সমানে। শহীদ হতে জানে অকাতরে। এই সংকট কি আদৌ কাটানো সম্ভব?

আসলে সংকট কাটানোরই কোন আকাঙ্ক্ষা পৃথিবীর নেতাদের নেই। দুনিয়াকে শাসন করতে বিভাজিত রাখতো হবে। এটা তাদের নীতি। এক পক্ষ থাকবে দুর্বল আরেক পক্ষ সবল। দুর্বলের উপর ধারাবাহিক অত্যাচার চালিয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখে সবল। এটা যে কেউ বুঝবে, ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংকটের সমাধান ইসরাইল ও তার মিত্ররা কখনোই চায় না। ইসরাইল জাস্ট একটা বৈশ্বিক সংকট ও সংঘাতের নাম। এটা কোনো রাষ্ট্র না। ইসরাইলের চাইতে বেশি ইহুদি আমেরিকায় বাস করে। পৃথিবীর কোথাও এমন নজির নেই, ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র নির্মাণকরে সেই রাষ্ট্রের চেয়ে অন্য রাষ্ট্রে স্বধর্মের লোক বেশি বাস করে।

ইহুদি মাত্রই ইসরাইলের নাগরিক। এটা একটি রাজনৈতিক আইওয়াশ। আর জায়োনিজম ইস্যুটাও রাজনৈতিক, ধর্মভিত্তিক না। ধর্মের রং চড়িয়ে প্রমিজ ল্যান্ড ঘোষণা একধরনের প্রতারনা। জায়োনিস্টরা আদতে ধার্মিকই না। এটা একটা পলিটিকাল ক্লাব। আরব বিশ্বের মুসলিম শাসকদের একটা অংশও জায়োনিস্ট। জায়োনিজম হচ্ছে ইউনিপোলার গ্লোবাল সিসটেম এস্টাবলিশমেন্টের একটা ফান্ডামেন্টাল পলিটিক্যাল টুলস। সেজন্য দেখবেন বাইপোলার গ্লোবাল অর্ডার ঠেকিয়ে রাখতে রাশিয়া বা চীন কাউকেই উঠতে দেবে না। ক্যাপিটালিজম আর জায়োনিজম হাত ধরাধরি করে চলে। দুনিয়ার সকল পুঁজি জায়োনিস্টদের হাতেই।

সবাই জানে ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যোদ্ধারা দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। আরো হবে। সারা দুনিয়ার মজলুম, নিরীহ, সাধারণ মানুষেরা তাদের পক্ষে। তারপরও কোন সমাধান নেই। কারণ ইসরাইল ধারনাটিই হলো একটা ক্লাসিকাল অর্ডার অব সুপ্রিমেসি। অবচেতনে মেনে নিতে হবে যেন, মানবজগতে ইসরাইল মানেই একটা শ্রেষ্টত্বের ধারনা। অনেকে এখন সেটা স্বীকারও করেন। জায়োনিস্টরা শ্রেষ্ঠত্বের আসনে থাকতে প্রয়োজনে সারা দুনিয়াকে কয়েকবার ধ্বংস করবে। তারা মনে করে সেই অধিকার তাদের আছে। ইসরাইল কনসেপ্টটাকে এক কথায় ভাবতে পারেন পাওয়ার অব ওয়ান আইড দাজ্জাল। এখানে ইহুদি,মুসলিম, খ্রিষ্টান খুঁজে কিছু পাবেন না। সমাধানও করতে পারবেন না। ইহুদি মাত্রই জায়োনিস্ট নয়। অনেক ইহুদি আছেন ইসরাইল বিরোধী। আবার মুসলিম হয়ে জায়োনিস্ট আছেন। কনসেপ্ট ক্লিয়ার করতে হবে। ইসরাইল একটা ফিতনার কনসেপ্ট। জায়োনিজম হলো তত্ত্ব আর ইসরাইল হলো পাসপোর্ট অব আইডেন্টিটি। গ্রেটার ইসরাইলের কল্পিত ম্যাপ আমরা জানি। তবে পুরো দুনিয়াই গ্রেটার জায়োনিজমের ভেতরেই ইতোমধ্যেই দাঁড়িয়ে আছে। শুধুমাত্র আপাদমস্তক নিষেধাজ্ঞার ভেতরে যারা আছেন, তারা ছাড়া। এটা কি ভেবে দেখেছি কখনো!

ইসরাইল জানে সে নিজেও কখনো শান্তিতে থাকতে পারবে না। সে যেমন আঘাত করতে থাকবে পাল্টা তার উপরও আঘাত আসতে থাকবে। একটা চলমান সংকট হিসেবে আমরা বা দুনিয়ার সাধারণ মানুষেরা দেখলেও ইসরাইল-থটের এটাই প্রাকটিস। সে প্রতিনিয়ত হামলা করেই যাবে। তারপর মাঝে মাঝে হামলার শিকার হবে। এটাই চলমান প্রক্রিয়া। টু স্টেইট পলিসি তাদেরই আবিষ্কার। দুই রাষ্ট্র জায়োনিজম চেয়েছে। তারপর যখন সবাই (সবাই বলতে এখানে ধ্রুবক, বড় একটা অংশ) এই নীতিকে গ্রহণ করে সমাধান চাইলো। এখন আর সমাধান নেই। এখন তারা বলছে কেবলমাত্র ইসরাইলই থাকবে।

১৯৪৭ সালে ইসরাইল নামে কোনো রাষ্ট্র ছিল না
ধরুন, পুরোটা ইসরাইলের ম্যাপে ঢুকলো। তাতে কি সমাধান? না। তখন শুরু করবে তাদের গ্রেটার ইসরাইলের কার্যক্রম।

এজন্য ইসলামী ইরান মনে করে ইসরাইল নামে কিছু দুনিয়াতে থাকবে না। কারণ এটাই দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ফিতনা। সকল ফিতনার স্রষ্টা। তাই মুসলমানদের ইবাদতের অন্যতম কাজ হলো ইসরাইল নামক ফেৎনার বিরুদ্ধে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ জারি রাখা। মুসলমানদের আয়, ব্যয়, জীবন যাপনকে সামগ্রিকভাবে হালাল রাখতে এই জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর কোন বিকল্প নেই। মুসলিমদের জায়োনিস্টদের মত করে আয়েশি জীবন যাপনের কোনো সুযোগ নাই পৃথিবীতে। ইসরাইল ফিতনা আর জায়োনিস্ট তত্ত্ব যতদিন দুনিয়াতে অবশিষ্ঠ থাকবে ততদিনই জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ বাধ্যতামূলক মুমিনের জন্য। আমার এই লেখাও জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর অংশ। জিহাদের ফলাফল খোদায়ি। সেটা তিনিই নির্ধারণ করে রেখেছেন। সেটা নিয়ে শঙ্কিত হওয়া যাবে না। ইসরাইল ফিতনা আর জায়োনিজম তত্ত্ব যতদিন কার্যকর থাকবে ততদিন একদল মুমিন স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করবে না। শহীদি তামান্না তাদের জন্য নির্ধারন করা। তাঁরা অকাতরে শহীদ হবেন। তারাই সেই জমানার শ্রেষ্ঠ মুমিন। জীবনের সকল আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করা মুমিন ছাড়া কারো পক্ষে সম্ভব না।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা অনুযায়ী রাষ্ট্রের যে ধারনা সেই ফ্রেমে ইসরাইলকে রাখলে কেউ কোনো সমাধান খুঁজে পাবেন না। দাজ্জাল ফিজিক্যালি যা যা করবে ইসরাইল তাই করছে। তাই ইসরাইল একটা দাজ্জালী ফিতনা। এটাকে বস্তুবাদী চিন্তা দিয়ে ডিফেন্ড করা যাবে না। আবার এর বিরুদ্ধে কেবলমাত্র সফল হতেই জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর চর্চাও করা যাবে না। মুমিনের সাফল্যের ধারনাটা আধ্যাত্মিক। ইসরাইল পরিষ্কার একটা ফিতনা তাই সর্বাবস্থায় তার বিরোধিতা ও আবু লাহাবের মত ধ্বংস কামনাই মুমিনের কাজ।

তাই ইসরাইলের সাথে চলমান সংঘাত কোন সাধারণ বিষয় নয়। একজন প্রাকটিসিং মুসলমান মাত্রই ইসরাইলের ধ্বংস এবং জিহাদের মাধ্যমে শহীদের মর্যাদা চাইবে। বর্তমান দুনিয়ায় ঈমানের সাথে থাকতে এটাই সিরাতুল মুস্তাকিম বা সরল পথ।

লেখক: সাইফুল খান
ইতিহাস, রাজনীতি ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশ্লেষক

تبصرہ ارسال

You are replying to: .